শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত- দেশের ১৫ অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি

প্রকাশঃ জানুয়ারি ৯, ২০২৩ সময়ঃ ৬:১৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১৯ অপরাহ্ণ

আবহাওয়া ডেস্ক

দেশজুড়েই এখন শৈতপ্রবাহের আতংক। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মানুষ প্রচন্ড শীতে কাঁপছে গত কয়েক দিন ধরেই। উত্তরবঙ্গের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে টানা দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। সোমবার (০৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা কমে গেলেও কমেনি দেশের অন্য জেলা গুলোতে। গত দুদিনে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮, আর সর্বনিম্ন  ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গায় টানা চার দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে।

আর পঞ্চগড়ে তাপমাত্রার পারদ নামছেই। তাপমাত্র ৭ ডিগ্রিতে নেমে গেছে! সোমবার মধ্যরাত থেকে নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার একই জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে দেশের সব এলাকার তাপমাত্রা। ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আছে ১৫ অঞ্চলের তাপমাত্রা। এরমধ্যে তেতুলিয়ায় ৯.৬, বদলগাছিতে ৯.৮, যশোর ও দিনাজপুরে ১০, সাতক্ষীরায় ১০.২, সৈয়দপুরে ১০.৫, ঈশ্বরদীতে ১০.৪, কুমারখালি, ডিমলা ও রাজশাহীতে ১০.৬, বরিশাল ও বগুড়ায় ১০.৭, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে ১০.৮, নিকলির তাপমাত্রা ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

প্রতিদিনের মতো আজকেও সূর্য উঠেছে সকাল ১০টার পরে। তবে রোদের প্রখরতা একেবারেই কম। ঠান্ডায় জড়োসড়ো হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। খেটে খাওয়া মানুষরা ঠিকভাবে কাজে বের হতে পারছেন না। তাদের আয় রোজগার কমে গেছে। ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। অনেক স্থানেই শীতার্ত মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যাচ্ছে।

দিনাজপুর সদরের এলাকার ভ্যানচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন,‌ ‘সকালে ‌ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি, কিন্তু শীতে হ্যান্ডেল ধরে রাখতে পারছি না। প্রচন্ড ঠান্ডায় প্যাডেলে চাপ দেওয়া যাচ্ছে না। একটু আগুন পোহালাম। এই ঠান্ডায় লোকজনের চলাচল কমে যাওয়ায় আমাদের উপার্জন কমে যাচ্ছে।’

একই এলাকায় আগুন পোহাচ্ছিলেন মনসুর আলী। তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় তো কাজই হচ্ছে না। বাড়ি থেকে বের হয়েছি কিন্তু কাজ করতে পারছি না। আর ইচ্ছা করছে না কাজ করি। ঠান্ডায় জীবন শেষ।’

নয়নপুর এলাকার কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, ‘বোরো ধানের বীজতলা থেকে চারা গজাচ্ছে না। প্রচন্ড ঠান্ডা আর কুয়াশা হলে এমনটা হয়। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ চারা গজিয়েছে। বাকি বীজ মরে গেছে। শুধু বোরো বীজতলাই নয়, আলু আর টমেটোতে দেখা দিয়েছে পাতামরা রোগ। কুয়াশার জন্য এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। গত কয়েকদিন ধরেই তো প্রচন্ড কুয়াশা, তাই রোগটি দেখা দিয়েছে।’

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ২ কিলোমিটার। এর আগে রবিবারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ গত তিন দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বিরাজ করছে, যাকে আবহাওয়ার ভাষায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ‌

দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদফতরের ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান জানান, চলতি মাসে এই জেলায় দুটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে বৃষ্টিপাতও হতে পারে।

সূত্র : আবহাওয়া অধিদপ্তর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G